ধারাবাহিক ২
কর্মজীবনের সবখানেই রেখে এসেছেন দুর্নীতির অমোচনীয় চিহ্ন
- আপলোড সময় : ১৬-১২-২০২৪ ০৭:৪৩:১৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৬-১২-২০২৪ ০৭:৪৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি :: পার্বত্যাঞ্চল রাঙামাটির বরকল উপজেলার শিক্ষকদের বকেয়া বিলের জন্য ১০ শতাংশ টাকা প্রকাশ্যে ঘুষ নিয়ে পাহাড়ে আলোচনার জন্ম দেন শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম। গাইবান্ধা সদর ও পাবনার বেড়া উপজেলায় কাজ করার সময়ও নানাখাতে প্রকাশ্য দুর্নীতি করেছেন। এই দুটি স্টেশন থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে তাকে পানিশমেন্ট বদলি করা হয়। তবে পাবনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় তদন্ত শুরু করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে তার কর্মএলাকার দুর্নীতির অমোচনীয় চিহ্ন। স্থানীয়ভাবে ও মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতিটি তদন্তে সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। শাল্লা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় সালামের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গাইবান্ধার একাধিক শিক্ষক সালামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। রাঙামাটির বরকলে গ্রেড উন্নীত করতে গিয়ে শিক্ষকদের বেতনের ১০ শতাংশ ঘুষ নিয়েছিলেন সালাম। পাবনার বেড়া উপজেলায় দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজের ৩০ শতাংশ ঘুষ নিতেন। ২০২১ সালের ২৩ জুন শিক্ষকরা এই অভিযোগে বেড়ায় তার কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। গত এক দশকে অধিদপ্তর দুর্নীতির জন্য তাকে শাস্তিমূলক বদলি করেছে একাধিকবার। বেড়ায় স্লিপের টাকা, ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা, ওয়াশ ব্লক, বিদ্যালয়ের রুটিন মেরামতের বরাদ্দ থেকে প্রকাশ্য কমিশন নিতেন বলে মন্ত্রণালয়ের তদন্তে এসব ওঠে এসেছিলে। এছাড়াও ঠাকুরগাওয়ের বালিয়াডাঙ্গায় কাজ করার সময় দুর্নীতির কারণে ১৫ শিক্ষকের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেছিল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। ২০১০ সালে সালাম এই উপজেলায় থাকাকালে ব্যাক ডেটে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে শূন্যপদে নিয়োগ প্রদান করে বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে ওই শিক্ষকদের নিয়োগ আটকে দিয়েছিল। তদন্ত কমিটি সালামের এই দুর্নীতিকে ‘শাস্তিযোগ্য’ বলে মতামত দিয়েছিল। বালিয়াডাঙ্গায় কাজ করার সময় দুর্নীতির কারণে ১৫ শিক্ষকের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে আটকে দেওয়া বিষয়ে সালামের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি ২০১৩ সালে সালামের দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল- সালাম পূর্ববর্তী কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে, ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেছেন। এ নিয়ে ঠাকুরগাও জেলায় তোলপাড় শুরু হয়। নিয়োগবঞ্চিতরা এ ঘটনায় সচিব, মন্ত্রী ও অধিদপ্তরে সালামের দুর্নীতির অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উপপরিচালক ড. জয়নুল আবেদিনকে বালিয়াডাঙ্গা উপজেলায় এসে তদন্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তিনি অফিসে এসে সালামের তৈরি কাগজপত্র জব্দ করেন। ড. জয়নুল আবেদিনের তদন্তে নিয়োগের দুর্নীতির বিষয়টি আবারও প্রমাণিত হয়। ওই বছরের ৯ জুন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর উপপরিচালক নবী হোসেন তালুকদার চূড়ান্ত প্রতিদবেদন জমা দেন। ওই বছরের ২২ এপ্রিল যাচাই-বাছাই কমিটি একটি তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি ১ অক্টোবর নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে তাদের প্রতিবেদন উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেয়। গাইবান্ধা সদরে দায়িত্ব পালনকালে ৩০টি বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ডের দুর্নীতির কারণে শিক্ষকরা অভিযোগ লিখিত অভিযোগ করেন। প্রাক প্রাথমিক, ক্ষুদ্র মেরামত, নতুন শিক্ষকদের জিপিএফ ফান্ড খোলার জন্য টাকা আদায়, ল্যাপটপ বিতরণের জন্য কমিশন, শ্রান্তি বিনোদেন ছাড়ের জন্য টাকা, ২০১৮ সালের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় পোষ্য কোটার প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল সালামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এভাবে শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম যেখানে গেছেন দুর্নীতি ও অনিয়মের স্বাক্ষর রেখে এসেছেন পদে পদে। তবে শাল্লা উপজেলায় এসে স্কুল ফাঁকিবাজ চারজন শিক্ষক নেতার নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। যে কর্মকর্তাই আসেন তাদেরকে নানাভাবে ম্যানেজ করে ওই নেতারা দুর্নীতি করেন। কিন্তু সালাম যেহেতু নিজ মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত তাকে বশ করতে অসুবিধা হয়নি ওই শিক্ষক নেতাদের। আওয়ামী লীগ আমলের একচেটিয়া সুবিধাভোগী শিক্ষক নেতারা বোল পাল্টে এখন সালামের সব কাজের সহযোগী হয়েছেন। প্রতিবাদী শিক্ষককে কিভাবে ‘সাইজ’ করতে হবে, কমিশন না দিলে কিভাবে ভোগান্তি দিতে হবে এই শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেন তিনি। এমনকি শিক্ষকদের স্কুল ফাঁকি দিয়ে তিনি প্রায়ই সিন্ডিকেটকে নিয়ে স্কুল ভিজিটে গিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আসেন এমন অভিযোগ আছে। এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আব্দুস সালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত নই’ বলেই তিনি ফোনকল কেটে দেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ